
আজ শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্যাংশনের ভয় দেখানো হয়েছিলো। সমালোচকরা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ১৪, ১৮ প্রত্যেকটি নির্বাচন না হওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র হয়েছে। এবারও চক্রান্ত হয়েছে। বিএনপি এবারও নির্বাচন করবে না। তারা চায় অনির্বাচিত সরকার। তারা জানতো জনগণের কল্যাণে কাজ করে মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসবে জানতো। আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে চেয়েছে বিএনপি। সাথে ছিল কিছু বিদেশি প্রভু। বিএনপির মুখে ভোট ও গণতন্ত্রের কথা শুনলে হাসি পায়।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। দেশে কিংবা বিদেশে যারা বলছে নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ হয়নি তাদের সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে কোথায় কিভাবে সমস্যা। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু হয়েছে। সম্পৃক্ত সবাই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন নিয়ে যখন দেখলাম বিরাট চক্রান্ত, স্যাংশনের কথা বলা হয়েছিল, সেদিকে লক্ষ্য রেখে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যেন নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হয়, ভোটার আসে। সে জন্যই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। মুখে অনেকেই বললেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না কেউ।
এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র, দলীয় করতে গিয়ে মন কষাকষি হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ঘিরে যেটা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। সবাই একসাথে কাজ করতে হবে। নিজেদের মধ্যে যেন আত্মঘাতী সংঘাত না হয়। কোনো সমস্যা থাকলে আমরা আছি। একে অন্যকে দোষারোপ করার মানে হয় না। এবার নৌকার জোয়ার ছিল। সেই জোয়ারের দাঁড়াতে না পারলে দোষ কার? এবার নির্বাচন উন্মুক্ত না করলে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয়, গণতন্ত্রকে হরণ করা হতো। দেশের অর্জন নস্যাৎ হতো।
তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে কাজ করতে আহ্বান জানাই। এছাড়া মজুতদারি ও চাঁদাবাজিতে দ্রব্যের দাম যেনো না বাড়ে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা বিশ্বাস যেন নষ্ট না হয়। মানুষের মন জয় করে থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সমস্ত চক্রান্ত রুখে দিয়ে যেমন নির্বাচন করেছি, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইশতেহার বাস্তবায়ন করবো। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হবে দেশ। ধারাবাহিকতা থাকলে দেশের উন্নয়ন টেকসই হয়। আওয়ামী লীগের সবাই একসাথে কাজ করেছি বলেই এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা করবো। অনেকেই অনেক কথা বলবে। অনেকে আজগুবি কথাও বলছে টক শোতে। যে যা বলে বলুক, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতা নিজের আখের গোছানোর জন্য নয়, মানুষের ওয়াদা পূরণের জন্য। একথা সব জনপ্রতিনিধিদের মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগকে কেউ ক্ষমতায় আনেনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেই ক্ষমতায় এসেছে। সামনে প্রচুর বিনিয়োগ আসবে। যতদূর এগোতে পেরেছি, এখান থেকে যেন আর না পিছিয়ে যায়। অগ্রযাত্রা যেন নস্যাৎ করতে না পারে সেজন্য অতন্দ্র প্রহরী হতে হবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।
তিনি বলেন, সামনে উপজেলা নির্বাচন। প্রত্যেক নির্বাচন উন্মুক্ত করেছি। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায়। কারা মানুষের জন্য কেমন কাজ করেছেন যাচাই হয়ে যাবে। অগ্নিসন্ত্রাস করে, অন্যান্য অপকর্ম করে যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে তাদের মামলা চলবে।
সভায় উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা মনে করেন নির্বাচনের পর এটা মিলনমেলা। কারো কোনো ক্ষোভ থাকলে আজই সব মিটিয়ে ফেলবেন। তাহলে কারো কোনো দুরভিসন্ধি সফল হবে না।
তিনি বলেন, গণভবন আপনাদের পদার্পণে ধন্য হয়েছে। এটা আপনাদেরই ভবন। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর গণতন্ত্রের কবর রচনা হয়। ক্ষমতা বন্দি হয় ক্যান্টনমেন্টে।
সকাল পৌনে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে এই বিশেষ সভা শুরু হয়। এর আগে সকাল ৮টা থেকে সারাদেশ থেকে আসা নেতারা গণভবনের সামনে জড়ো হন এবং সাড়ে আট থেকেই এক এক করে নেতারা গণভবনে প্রবেশ করেন।
সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা-মহানগর ও উপজেলা-থানা-পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্য এবং জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।